বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও কোটা সংস্কার

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও কোটা সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিহাসমুখী বিষয়। ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনও তার মধ্যে একটি বড় উদাহরণ।

কোটা সংস্কার আন্দোলন:

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কোটা ব্যবস্থা মূলত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি, প্রতিবন্ধী, জেলা কোটা এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য প্রবর্তিত হয়েছিল। তবে, ২০১৮ সালে ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, কোটা ব্যবস্থার অসঙ্গতি দূর করা এবং এটি শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা।

কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মূল কারণগুলো:

  1. অন্যায় সুবিধা: অনেক ছাত্র অভিযোগ করেন যে, কোটা ব্যবস্থার কারণে অযোগ্য বা কম মেধাবী ছাত্ররা চাকরিতে স্থান পাচ্ছে, যার ফলে মেধাবী সাধারণ ছাত্ররা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

  2. বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবীদের প্রতিবন্ধকতা: কোটা ব্যবস্থার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরিতে মেধাবী ছাত্রদের অগ্রাধিকার পাওয়ার সুযোগ কমে যায়।

  3. কোটার বাস্তবতার পরিবর্তন: অনেকেই মনে করেন যে, সময়ের সাথে সাথে কোটা ব্যবস্থা আর প্রয়োজনীয় নয়, বিশেষ করে যখন দেশের বেশিরভাগ জনগণ শিক্ষিত এবং উন্নত অবস্থায় পৌঁছেছে।

আন্দোলন ও এর ফলাফল:

২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা কোটা সংস্কারের জন্য ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। তারা দাবি জানায়, ৫৬% কোটা বাতিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরিতে সুযোগ বাড়ানো হোক। আন্দোলনটি এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত
সরকার কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের কথা ঘোষণা করে।

বিশেষত:

  1. কোটা সংস্কারের ঘোষণার পর সরকার ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কোটা ব্যবস্থাকে পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

  2. সামরিক ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা: মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা কিছুটা রাখার সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু অন্যান্য কোটা বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এছাড়া, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন সাধারণত বিভিন্ন বৈষম্য, শিক্ষার মান, ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা ও সরকারের নীতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলে।

ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত:

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০০৭ সালের শাপলা চত্বর আন্দোলন। এগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতীয় স্বার্থ এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে।

তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন বিশেষভাবে দেখিয়েছে যে, বাংলাদেশের ছাত্ররা তাদের অধিকার ও ন্যায্যতার জন্য সংগঠিত হয়ে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করতে সক্ষম। এটি প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যতের জন্য সচেতন এবং তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে আগ্রহী।

আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানাতে চান বা বিশেষ কোনো বিষয়ে আলোচনা করতে চান, আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত!

Comments

Popular posts from this blog

তোমার অপেক্ষায়

https://sites.google.com/view/ashikok/home

খালেদা জিয়া বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় কি না, দেখার পর তারেকের ফেরার সিদ্ধান্ত!!!!!